আরমান আহমেদ সিদ্দিকি: করোনাভাইরাসের কারণে দেশের লাখো মানুষ দিনে দিনে অনাহারের দিকে এগিয়ে যাবে তা অমূলক। মোদ্দাকথা হচ্ছে যে মানুষটা একটা চালু চা দোকানের মালিক ছিলেন বা যে শ্রমিকের হাত থাকতে ভাতের অভাব হতো না, সে মানুষগুলা আস্তে আস্তে দরিদ্রসীমার দিকে চলে যাচ্ছেন, যাবে অথবা মৌলিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করবেন। আর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কিংবা অর্থনীতির বিপর্যস্তের কথা তো বাদই দিলাম।
সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে, মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে বাসার বাইরে বের হয়ে যাচ্ছেন, বাংলার যেখানে–সেখানে ক্ষুধাকাতর মানুষের দেখাও মিলছে। সমস্যা হচ্ছে যাঁরা ভিক্ষুক, তাঁরা দ্বিগুণ পাচ্ছেন। আবার অনেক হাত পাততে লজ্জা পান, তাঁরা খুব মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সামনে যখন মানুষের জমানো টাকা শেষ হয়ে যাবে, তখন কী অবস্থা হবে বুঝতে পেরেছেন? আমাদের কি এখনো খাদ্যসামগ্রী প্রদান অনুষ্ঠান করতে হবে! আমি বিস্ফারিত নেত্রে খবরে দেখি খাদ্যসামগ্রী দেওয়া নিয়ে খবরের ছবি হচ্ছে। নাম বলছে ছবি আসছে স্টেডিয়ামের দূরে দূরে করে বসাচ্ছে। কিন্তু আমরা কি দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছে দিতে পারছি?
আমাদের সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হয়ে যাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও চিকিৎসকদের, যাঁদের আমাদের আলাদা ও বেশি করে যত্ন নিতে হবে। দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছাতে অক্ষম হলে রোগীর সংখ্যাটা কল্পনা করতে পারছি না।
এমন পরিস্থিতিতে করজোড়ে প্রার্থনা হলো—
১.
সরকারি পর্যায়ে যেহেতু প্রণোদনা শুরু হয়েছে এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে মানুষের প্রচুর সাড়া পাওয়ায় বিদ্যানন্দের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলছে, এই দায়িত্ব, নীতিনির্ধারকেরা নীতিমানদের প্রতি ন্যস্ত করা বাঞ্ছনীয়।
২.
এখন যেটা করতে হবে সেটা হলো কাছে বা দোরগোড়ায় অভুক্ত থাকা মানুষদের শনাক্ত করা। ধরেন আমরা জানি যে ধানমন্ডিবাসীর হয়তো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু রায়েরবাজার বা মিতালি হাউজিংয়ের খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে আছেন। ফ্ল্যাটের দারোয়ান, ছুটা বুয়াদের কী হবে? বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতন ওদের লাইনে রেশন দেওয়া যাবে না।
৩.
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা অন্য অবলম্বনে জরিপ করা যেতে পারে, তারপর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে রেড ক্রিসেন্ট বা স্থানীয় থানার সমন্বয়ে ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে, যাদের কাজ হবে বাড়ি ও মানুষ হিসেবে খাদ্যসামগ্রী পাঠানো। তালিকা প্রণয়ন, ছোট প্যাকেট করণ ও বিতরণ যার যার এলাকার টাস্কফোর্সের দায়িত্ব। হ্যাঁ আবার বলছি রাস্তায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ বন্ধ করতেই হবে।
৪.
বাড়ি অনুযায়ী প্যাকেট করার পর সেই টাস্কফোর্সের কাজ হবে সব বাড়ির দোরগোড়ায় সেই রেশন, খাবার, প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া। একটাই শর্ত, যে মানুষটি দোরগোড়ায় প্যাকেট পৌঁছাবেন, তাঁকে অবশ্যই পিপিই পরিধান করতেই হবে।
৫.
আবার বলছি, কোনোভাবেই লাইন করে, কোনো দলের ব্যানারে বা বাসায় ডেকে এ রেশন বা খাদ্যসামগ্রী বা ত্রাণ যাই বলি না কেন, তা বিতরণ করা যাবে না
এমন করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বেশ জায়গায় ঘরের দোরগোড়ায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে।
এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল গাড়ির মাধ্যমে ছিন্নমূল মানুষদের রান্না করা খাবার সরবরাহ শুরু হয়েছে। এই সেবাটা শতভাগ সফল বলেই আমি মনে করি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার টাস্কফোর্সে আনা ব্যাপারটা অতীব জরুরি। তাঁরা করছেন এবং এটা যদি সমন্বয়ের মাধ্যমে হয়, বস্তির প্রতিটি মানুষ রিলিফ পাবে
যদি এই কনসেপ্ট সফল হয় সারা বাংলাদেশে এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে সম্পদ, জান, মাল ও মানবতার সঠিক প্রয়োগ হবে বলে আশা রাখছি। চীনের উহানে এমন কনসেপ্ট বাস্তবায়ন করার পর চার মাস লেগেছে। আমরা না মানলে কত দিন লকডাউন থাকব জানি কি?
সবচেয়ে বড় কথা, একসঙ্গে এ উদ্যোগ চালালে আমরা সফল হব ইনশা আল্লাহ।